প্রকাশিত: Fri, Jun 7, 2024 12:18 PM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 12:20 AM

[১]কর ও শুল্ক হারের পরিবর্তন করে ২০২৪-২৫ সালের বাজেট প্রস্তাব

বিশ্বজিৎ দত্ত: [১.১] অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর উত্থাপিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি, রাজস্ব আয় ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি, ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি 

[২] প্রস্তাবিত বাজেটের শুরুতেই মূল্যস্ফীতির জন্য দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বললেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বৈদেশিক পরিস্থিতির উন্নয়নের দিকেই দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। 

[৩] সেখানে স্বীকার করা হয়েছে, ভারতে মূল্যস্ফীত ৩.৪৭ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশেই রয়েছে। এটি না কমার ব্যর্থতাও বাজেট বক্তব্যে পরোক্ষভাবে স্বীকার করা হয়েছে। 

[৪] ২০২৪-২৫ সালের বাজেটটি আওয়ামী লীগ সরকারের চতুর্থ বারের সরকার গঠনের প্রথম বাজেট। আওয়ামীলীগের নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেটটি প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি অর্থমন্ত্রী হিসাবে তার প্রথম বাজেট। 

[৫] ইশতেহারের ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট প্রস্তাবটি হলেও ১ নম্বর বিষয় মূল্যস্ফীতির বিষয়ে আগের বাজেটের বক্তব্যই রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি সাধারণ মানুষের জন্য টিসিবির পণ্য বিতরণ, আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যমূল্য কমার পূর্বাভাসের উপরেই নির্ভর করেছেন। 

[৬] তিনি প্রস্তাবিক বাজেটে মূদ্রানীতি ও কর নীতির বিশেষ কোন পরিবর্তন করেননি যাতে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে। 

[৬.১] বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬.৫ শতাংশ। এই সময়ে জিডিপি বৃদ্ধির হারও ধরা হয়েছে ৬.৭৫ শতাংশ। তবে মধ্য মেয়াদে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে ৭.২৫ শতাংশ হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। 

[৭] বাজেটে কর আহরণে রাজস্ব বোর্ডের আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য উৎস্য থেকে কর আহরণ দেখানো হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকার। 

[৮]  কর  কাঠামোতে আগের ৫টি স্থলের স্থলে ৬টি স্থির করা হয়েছে। অর্থাৎ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত আয়সীমা। মহিলা ও বয়স্ক নাগরিকদের জন্য  জন্য ৪ লাখ পর্যন্ত। এরপরের স্থরগুলো যথাক্রমে ৩ লাখ ৫০ হাজরের পরে ১ লাখ টাকায় ৫ শতাংশ কর, ৩ লাখ টাকার উপরে ১০ শতাংশ, ৪ লাখে ১৫, ৫ লাখে ২০ ও লাখে ২৫ শতাংশ। এবারে এর উপরের আয়ে ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে।

[৯] ধনীদের সম্পদের উপর সারচার্জে কোন পরিবর্তন করা হয়েনি। তবে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে মূল আয়করের উপরে ১৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে সম্পদ প্রদর্শনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে সকল প্রকার আইন থেকে করদাতাকে অব্যাহতির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। 

[১০] কোম্পানির করের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে, পাবলিক ট্রেটেড নয় এমন কোম্পারি কর হার শর্ত সাপেক্ষে পরিবর্তন করে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগে এটি ২৭.৫ শতাংশ ছিল। শর্তটি হলো ৫ লাখ টাকার উপরে লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে।  এক ব্যক্তির কোম্পানির ক্ষেত্রেও কর কমানো হয়েছে। সেখানেও একই শর্ত বিদ্যমান রাখা হয়েছে।  পাবলিক ট্রেটেট কোম্পানির কর আগের মতোই ২২.৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। তবে সমবায়ের কর বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। 

[১১] শুল্ক কাঠামোতে আগের ৬ স্থরের অর্থাৎ শূণ্য থেকে ২৫  শতাংশ শুল্কস্তর অব্যাহত রাখা হয়েছে। সম্পূরক শুল্কেও পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ ১০ থেকে শুরু করে ৫০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক রাখা হয়েছে। 

 [১২] তবে আবগারি শুল্কে পরিবর্তন করে তা বৃদ্ধি করা হয়েছে, এখন ১০ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখলে ৫০০০ টাকা আবগারি দিতে হবে। ১ কোটি থেকে ২ কোটি পর্যন্ত ১০ হাজার ও ২ কোটি থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা আবগারি দিতে হবে। 

[১৩] বাজেটে সুদ পরিশোধের বিষয়ে বলা হয়েছে, টাকার মূল্য কমে যাওয়ায় বৈদেশিক সুদের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে, বাজেটে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করা হবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট জিডিপির ১৪.২৪ শতাংশ। 

[১৪] এর বাইরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সম্মিলিতভাবে শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গণশিক্ষায় ৩৮ হাজার ৮১২ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি, কারিগরি ও মাদ্রাসায় ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি। 

[১৫] স্বাস্থ্য খাতে ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি বারাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তায় এবার বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে কমেছে। ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে এখাতে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৬৭২কোটি থাকলেও এবারে তা  করা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। 

[১৬] পরিশেষ বাজেটের শেষাংশে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের দর্শনকে দর্পনে রূপান্তর করাই হবে এই বাজেটের লক্ষ্য।